বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসাস্বাস্থ টিপস

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

Table of Contents

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

সর্দি-কাশি-জ্বর সাধারনত একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। আমাদের শ্বাসনালীর উপরের অংশ এতে আক্রান্ত হয়। আমাদের স্বরযন্ত্রও আক্রান্ত হতে পারে। সর্দি-কাশি  ৫-৭ দিন স্থায়ী হয়। সাধারন সর্দি চিকিৎসা ছাড়াই আপনা-আপনি ভালো হয়। সর্দির সাধারন কিছু লক্ষণ রয়েছে। এগুলো মধ্যে নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, তালু ছ্যানছ্যান করা, সামান্য কাশি কিংবা একটানা কাশি। সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত এবং এর ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে এই লেখায় আপনাদের জানানো হবে।

সর্দি কাশি  কেন হয়?

মানব জীবনে সবচেয়ে বেশি হওয়া রোগের মধ্যে সর্দি-কাশি একটি। সারা বছর জুড়েই সর্দি-কাশি হয়ে থাকে। এটি মূলত ভাইরাসঘটিত সংক্রামক রোগ। শীত ও বসন্ত কালে এজাতীয় অসুখ বেশি হয়। আমেররিকার লস অ্যান্জেলস গ্যালাক্সি এর চীফ মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. জোশুয়া স্কট বলেন, “ঠান্ডা কিংবা ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার জন্য পৃথিবীতে শত শত ভাইরাস আছে যাদের কারনে মানুষ ফ্লু কিংবা ঠান্ডা জতীয় অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। তাই বছরে কয়েকবার ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়া তেমন আশ্চর্যের কিছু নয়।” এতসব ভাইরাসের মধ্যে সর্দি-কাশির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় রাইনোভাইরাস নামক একধরনের ভাইরাস কে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি বা ড্রপলেস স্পর্শের মাধ্যমে এই ভাইরাস সহজেই ছড়াতে পারে।

ভাইরাস সাধারনত জীবদেহে সক্রিয় অবস্থায় বিরাজ করে এবং জড় মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বিরাজ করে। অর্থাৎ জীব ও জড় উভয় পরিবেশেই ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে। ফ্লু ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং স্পর্শের মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। তাই সংক্রমিত রোগির কাছাকাছি আসলে অথবা স্পর্শর মাধ্যমে নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার চান্স রয়েছে। ফ্লু ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি কোথাও স্পর্শ করলে এবং সেখানে ভাইরাসের জীবাণু লেগে সেখানে হাত দেওয়ার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আক্রান্ত হতে পারে। আগে ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে পরবর্তীতে পুনরায়  সহজেই সর্দি-কাশি হতে শুরু হতে পারে।

ফ্লু কি?

সাধারন সর্দি-কাশির ন্যায় ফ্লু’র উপসর্গও প্রায় একই ধরনের। সাধারন সর্দি-জ্বরের মতোই হাঁচি, কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, জ্বর, খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ শক্তি লোপ পায়। ফ্লু এর লক্ষণগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকাশ পায়।  শরীর হটাৎ করে খুব দুর্বল বা ক্লান্ত হয়ে যায়।

সাধারন সর্দি-কাশি না ফ্লু কিভাবে বুঝবেন

লক্ষণসাধারন সর্দি বা ঠান্ডাফ্লু
কতদিন পর পর হয়সাধারন সর্দি-জ্বর-কাশি বছরে কয়েকবার পর্যন্ত হতে পারে।ফ্লুতে কয়েক বছরে একবার আক্রান্ত হতে পারে।
কিভাবে লক্ষণ প্রকাশ পায়লক্ষণ গুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।অল্প সময়ের মধ্যেই যেমন কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হটাৎ করে প্রকাশ পায়।
স্বাস্থ্য জটিলতাসাধারনত তেমন জটিল কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয় না।কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক এবং বিপদজনক স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়।
বুকে ব্যথাবুকে ব্যথা সামান্য হতে পারে নাও হতে পারে।বুক ব্যথা প্রায়ই হয়। এবং মাঝে মাঝে তীব্র আকারে বুক ব্যথা হতে পারে।
কাশিকাশি সামান্য হতেও পারে আবার কাশি নাও হতে পারে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাশি থাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তীব্র কাশি হয়।
গলা ব্যথাগলা ব্যথা কখনো হতে পারে আবার নাও হতে পারে।গলা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ক্লান্তি ও দুর্বলতাসামান্য আকারে হতে পারে।কিছু কিছু ক্ষেত্রে তীব্র হতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাবাভিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জ্বরসাধারণত জ্বর আসে না।জ্বর থাকে।
কারা আক্রান্ত হয়সব বয়সী ব্যক্তি সাধারন সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হয়।৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি। সেই সাথে গর্ভবতী মহিলা, এবং যেসব ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
খাবারে রুচিসাধারনত সবার ক্ষেত্রে কমে না।কমে যায়।
অন্যান্য অঙ্গনাক, শ্বাসনালী ও স্বরযন্ত্র আক্রান্ত হয়।নাক, শ্বাসনালী ও স্বরযন্ত্র  ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ আক্রান্ত হয়।

 

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

সর্দি-কাশি ও ফ্লু এর লক্ষণ প্রকাশের পর কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা

মধু দিয়ে আপনার গলা প্রশমিত করুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Cleveland Clinic এর ডাঃ কোরি ফিশার বলেছেন, “সর্দি কাশির জন্য সবচেয়ে প্রমাণিত প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি হল মধু। কাশি দমনের  জন্য এটি উৎকৃষ্ট। এতে প্রদাহরোধী এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য উভয়ই রয়েছে। এক বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের কাশির জন্য মধু সহায়ক হতে পারে।”

 

গরম স্যুপ এবং চাঃ

আমাদের সর্দি-কাশি কিংবা ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল খাদ্য। বিশেষকরে  তরল খাদ্য এবং বিশ্রাম। বড় এক বাটি গরম চিকেন নুডলস সেই সাথে অতিরিক্ত প্রোটিনের জন্য বাড়তি সবজি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। গরম চা এক্ষেত্রে কিছুটা সাহায্য করে। কারণ এই গরম পানীয়গুলি থেকে বাষ্প আপনার নাক এবং সাইনাসে চলে যাবে এবং এই বাষ্পটি সর্দি-কাশি দ্রুত সেরে তুলতে সহায়ক। গলা প্রশমিত করার জন্য চা এর সাথে কিছু আদা, লেবু বা মধু  যোগ করুন।

 

ঠান্ডা লাগলে আদা খেতে পারেনঃ

ঝাঝালো  স্বাদযুক্ত আদা একটি দুর্দান্ত ভেষজ প্রতিকার,  এটি চা, ঝোল, স্যুপ, তরকারি এবং আরও অনেক কিছুতে যোগ করে খেতে পারেন। আদা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, এবং এর শ্লেষ্মা-বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি সর্দি-কাশিতে আরাম পেতে সাহায্য করতে পারে।

লবন জল দিয়ে গড়গড়া কুলিঃ

সর্দি কাশিতে আমাদের অনেক সময় গলা ব্যাথাও হয়। নুন জল দিয়ে গারগেল গলার ব্যাথা আর সর্দি কাশির থেকে আরাম পেতে সাহায্য করে। নুনের সাথে হলুদও মেশাতে পারেন। 

গরম পানি খানঃ

সর্দি কাশি হলে গরম পানি পান করুন। এতে শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়ে।  দিনে তিনবার  খাবার খাওয়ার সময় ঠান্ডা জলের জায়গায় গরম জল খেলে গলা ব্যথা কমে এবং গলার খুসখুসে ভাব দুর হয়। গরম জল আমাদের ফুলে যাওয়া টনসিলকে কমায় ।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খান

ভিটামিন সি সর্দি-কাশির চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য বাজারজাত করা হয়।বেশিরভাগ মানুষের জন্য ভিটামিন সি সর্দি প্রতিরোধ করে না তবে রোগের তীব্রতা কিছুটা কমিয়ে দেয়। ভিটামিন সি সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়, তবে উচ্চ মাত্রায় পেটের সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।

তুলসি পাতা ঠান্ডাজনীত সমস্যা প্রতিরোধে ভালো কাজ করে

যদি কাশি হয় তাহলে তুলসি পাতা পিশে মধু দিয়ে খেতে পারে। এতে কাশি উপশম হয়। সর্দি কাশি প্রতিরোধে তুলসি পাতা ভালো কাজ করে।

এসব ঘরোয়া প্রতিকারের পাশাপাশি-

  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন 
  • যথেষ্ট পরিমানে ঘুমান
  • ঠান্ডা শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ঠান্ডা লাগলে শরীর উষ্ণ রাখুন। গরম কাপড় পরুন, গরম পানীয় পান করুন এবং উষ্ণ পরিবেশে থাকুন।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে।
  • সরিষার তেলে রসুন থেতলে দিয়ে সেই তেল গরম করে শরীরে বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে ঘষে নিলে একটু স্বস্তি লাগে।

 

বাচ্চাদের সর্দি-কাশি বা ফ্লু হলে বাড়তি পরিচর্যা প্রয়োজন

শিশুরা আলাদা এবং তাদের চিকিত্সার ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলিও আলাদা।  এ জন্য শিশুদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শিশু বড়দের মতো লবন পানি গার্গেল করতে পারবে না। এ জন্য যেসব পরিচর্যা শিশুবান্ধব তা অব্যাহত রাখতে হবে।

  • বাচ্চাকে পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।বাচ্চা যদি বুকের দুধ খায় তবে বার বার বুকের দুধ খাওয়ানর চেস্টা করুন।এসময় বাচ্চা যাতে করে পানিশুন্য না হয়ে পরে এর জন্য বেশী বেশী তরল খাবার দিতে হবে।বুকের দুধে অ্যান্টিবডি থাকে যা বাচ্চাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলে।
  • বাচ্চাকে মধু খাওয়ান। অবশ্যই খাঁটি শধু হতে হবে।
  • কয়েক কোয়া রসুন থেতলে নিয়ে সর্ষের তেলের সাথে গরম করে নিন, এই তেল বাচ্চার বুকে,পাঁজরে এবং গলায় মালিশ করলে বাচ্চা আরাম পাবে।
  • বাচ্চার  সদি-জ্বরের সাথে যদি কাশি থাকে তাহলে তুলসি পাতা পিশে মধু দিয়ে খাওয়ান। কাশি ভালো হয়ে যাবে।
  • কাশি বা সর্দিতে শিশুর নাক ঘনঘন পরিষ্কার করে দিতে হবে, বিশেষ করে শিশুটি খাওয়ার বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে।
  • শিশুর নাক বন্ধ হলে অতিরিক্ত বালিশ দিন।

আরো পড়ুন: বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত

ফ্লু ও সর্দি কাশির ঔষধ

কোনো ওষুধ সেবন ছাড়াই সাধারন সদি কাশি ৮-১০ দিনের মধ্যেই সেরে যায়। কিছু উপসগ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। লক্ষণ উপশমে কিছু ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

 

ব্যথা এবং জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল

 

প্যারাসিটামল  ঠান্ডা বা ফ্লু নিরাময় করে না, তবে  তাদের লক্ষণগুলি  জ্বর, মাথাব্যাথা ইত্যাদি কিছুটা উপশম করে। ঔষধ ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। ডাক্তার ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা, প্রয়োজনীয় ডোজ নির্ধারণ করবে।প্যারাসিটামল গ্রহণের সময় যদি আপনার কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত।

নাকের ড্রপস:

নির্দেশনা

তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী রাইনাইটিস, সাধারণ সর্দি, সাইনোসাইটিস, অন্যান্য অ্যালার্জির কারনে  নাক বন্ধ  হলে। অনুনাসিক ডিকনজেস্ট্যান্ট হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে  Xylometazoline Hydrochloride, Loratadine + Pseudoephedrine সহ আরো কয়েক গ্রুপের নাকের ড্রপ এবং স্প্রে নাক বন্ধের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ শ্বাসযন্ত্রের অ্যালার্জির কারনে সৃষ্ট লক্ষনগুলি উপশম করে।

ডোজ 
  • প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৬ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশু: ৩-৫ দিনের জন্য প্রতিদিন ২-৩ ফোঁটা বা প্রতিটি নাকে। 
  • 2-6 বছর বয়সী শিশু: 3-5 দিনের জন্য প্রতিদিন দুবার প্রতিটি নাকের ছিদ্রে 2-3 ফোঁটা।
  • ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সুপারিশ করা হয় না। 
ক্ষতিকর দিক

হাঁচি, নার্ভাসনেস, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা উচ্চরক্তচাপ, ধড়ফড় বা রিফ্লেক্স ব্র্যাডিকার্ডিয়া হতে পারে।

সতর্কতা
* উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হাইপারথাইরয়েডিজম গ্রহণকারী রোগীদের সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানে ব্যবহার করুন

গর্ভাবস্থা  ও দুগ্ধবতীঃ গর্ভকালীন ও স্তন্যদানকালীন সময়ে এটি এড়ানো উচিত। 

ওভার ডোজ

দ্রুত, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘাম বৃদ্ধি, নার্ভাসনেস। ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এই ধরনের উপসর্গ বেশি দেখা যায়।

বি:দ্র: চিকিৎসকের পরমর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ বা ড্রপস ব্যবহার করবেন না। 

 

কাশির সিরাপঃ 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাশি দমনকারী ওষুধগুলি সাইনাস বা বুকের শ্লেষ্মা পাতলা করতে পারে, যা শ্বাসনালী পরিষ্কার করা সহজ করে তোলে। 

ডঃ জেসন নাগাটা, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক্সের সহকারী অধ্যাপক, বলেছেন “শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের সাধারণত ওভার-দ্য-কাউন্টার কাশির ওষুধ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এর সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব আছে কিন্তু কোন প্রমাণিত উপকারিতা নেই”।অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাশির সিরাপ যদি লাগে তাহলে সেবন করবেন। কিছু কাশির সিরাপ আছে যেগুলো হারবাল।

 

অ্যান্টিহিস্টামাইনঃ

অ্যান্টিহিস্টামাইনগুলি নাক দিয়ে জল পড়া এবং হাঁচি বন্ধ করতে পারে তবে সেগুলি কতটা কার্যকর তা স্পষ্ট নয়।

 

কখন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে?

 

আপনার যদি ফ্লু জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে ডাক্তার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ লিখে দিতে পারেন। এই ওষুধগুলি অসুস্থতা নিরাময় করবে না। তবে আপনার লক্ষণগুলি শুরু হওয়ার পরেই যদি সেগুলি নেওয়া হয় তবে তারা সাহায্য করতে পারে। আপনার অসুস্থতার দৈর্ঘ্য কমিয়ে উপসর্গ কিছু উপশম করে  গুরুতর জটিলতার সম্ভাবনা হ্রাস করবে। 

শরীরে ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধি বন্ধ করে । ফ্লুর জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আদর্শভাবে লক্ষণগুলি অনুভব করার 48 ঘন্টার মধ্যে শুরু করা উচিত।

 

ফ্লু নির্নয়ঃ

ডাক্তার লক্ষণ দেখে অনেক সময় ফ্লু সনাক্ত করতে পারে। তারপরও যদি নিশ্চিত না হন সেক্ষেত্রে  সোয়াব পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

কখন আমাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে?

অ্যান্টিবায়োটিক সর্দি বা ফ্লুর লক্ষণগুলিকে সাহায্য করবে না বা অন্য লোকেদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করবে না। কারণ এগুলি ভাইরাল সংক্রমণ এবং অ্যান্টিবায়োটিকগুলি শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর।

এই ধরনের সংক্রমণে বেশিরভাগ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই নিজেরাই ভালো হয়ে যায়। আপনি যদি জটিলতার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। অ্যান্টিবায়োটিক আপনার জন্য সঠিক কিনা সে বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

 

সর্দি কাশি কি ওষুধ খাওয়া উচিত
সর্দি কাশি কি ওষুধ খাওয়া উচিত

প্যাকেজিংয়ে দেওয়া নির্দেশাবলী সর্বদা সাবধানে পড়ুন এবং অনুসরণ করুন

বিভিন্ন সর্দি এবং কাশি ওষুধের ডোজ পণ্যের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হবে। এগুলি ক্যাপসুল, ট্যাবলেট, তরল বা পাউডার হিসাবে পাওয়া যায় যা আপনি জলে মিশ্রিত করেন। লেবেল বা প্যাকেজিংয়ের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। এটি আপনাকে কতটা নিতে হবে, কত ঘন ঘন নিতে হবে এবং কোন বিশেষ নির্দেশনা বলবে। আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে পরামর্শের জন্য আপনার ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন।

আরও পড়ুন:

বমি কি? বমি কেন হয়? বমি হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত।

আমার ডাক্তারকে কখন দেখা উচিত?

 আপনার যদি ঠান্ডর লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তা থেকে  ফ্লু বা COVID-19  হওয়ার ঝুঁকি থাকে তবে আপনার অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। কিছু ক্ষেত্রে, আপনার ডাক্তার আপনার ঝুঁকি কমাতে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের সুপারিশ করতে পারেন।

এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারেঃ

  • শ্বাসকষ্ট
  • ১০৪ ডিগ্রির উপরে জ্বর
  • প্রচন্ড দুর্বলতা
  • পানিশূন্যতা
  • বুকে ও মাংশপেশিতে তীব্র ব্যথা
  • কাশির সাথে রক্ত যাওয়া

এছাড়া পূর্বের অসুখের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে জরুরী ভিত্তিতে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।

 

অসুস্থ বোধ করলে বাড়িতে থাকুন

আপনার ভাল বোধ না হওয়া পর্যন্ত আপনার বাড়িতে  বিশ্রাম নিন। বিশ্রাম  আপনাকে স্বাস্থ্যকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে। সেই সাথে অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াতে বাধা দেয়।

যথেষ্ট ঘুম

ঘুম সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ, তবে আপনি যখন ঠান্ডা লাগার  সর্দি-কাশি বা ফ্লু তে আক্রান্ত তখন ঘুম  আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ইমিউন সিস্টেমের সাথে লড়াই করার জন্য প্রচুর ঘুম আসে। এজন্য বেশি করে ঘুমনা।

নিজেকে সারাদিন বিছানায়  আবদ্ধ রাখবেন না

আপনার শরীরকে বিশ্রাম দিন, তাই বলে  নিজেকে সারাদিন বিছানায় শুয়ে রাখবেন  না।  কারণ সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকলে আরও অন্যান্য জটিলতা হতে পারে। যখন ফুসফুসে শ্লেষ্মা থাকে এবং কিন্তু কাশি বের করছেন না এবং গভীরভাবে শ্বাস নিচ্ছেন, তখন আপনার  নিউমোনিয়া হতে পারে। এছাড়  খুব বেশিক্ষণ বিছানায় বসে থাকা বা শুয়ে থাকার ফলে শরীর আরও দুর্বল হতে পারে। 

 

সম্ভব হলে মুক্ত বাতাসে হাটাচলা করুন

স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করার জন্য  যদি ক্লান্ত না হন তবে দিনের বেলা বেডরেস্টের পরিবর্তে ব্যায়াম (হালকা থেকে মাঝারি স্তরের) বজায় রাখুন। হাঁটা একটি আরামদায়ক, পরিচিত ওয়ার্কআউট যা অনেকগুলি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে।তবে মনে রাখবেন যে খুব বেশি কষ্ট করবেন না। 

কিছু কাশি এবং সর্দির ওষুধ আপনাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে তুলতে পারে

কিছু ওষুধের দিন এবং রাতের ডোজের মধ্যে সমন্বয় করা আছে।  রাতের ডোজগুলিতে এমন উপাদান রয়েছে যা আপনাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে তুলতে পারে। গাড়ি চালানো বা সরঞ্জাম ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন। 

আশা করি সর্দি কাশির ঔষুধ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে লেখা এই আর্টিকেলটি আপনাদের কিছুটা হলেও উপকার করতে পেরেছে।

আরো জানুন: কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

বি:দ্র: শুধুমাত্র ব্লগের লেখার উপর নির্ভর করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবুন করবেন না। অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ সেবন করবেন।

সর্দি কাশির ঔষুধ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে

আরো পড়ুন: শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

উৎস: সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়ার স্বার্থে যেসব ওয়েবসাইট অনুসরণ করা হয়েছে.

https://www.who.int/health-topics/influenza-seasonal?gclid=CjwKCAiAk9itBhASEiwA1my_61RHb-3rSIIW6SW07fuCFvrNfM0_35z95wUmufkZy3q6LbMQI6SLjxoC99IQAvD_BwE#tab=tab_1

https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/common-cold/in-depth/cold-remedies/art-20046403

https://www.webmd.com/cold-and-flu/14-tips-prevent-colds-flu-1

https://www.medicalnewstoday.com/articles/322394

https://www.webmd.com/cold-and-flu/ss/slideshow-natural-cough-remedies

https://www.everydayhealth.com/cold-and-flu-pictures/home-remedies-for-cough-1028.aspx

https://www.who.int/health-topics/influenza-seasonal?gclid=CjwKCAiAk9itBhASEiwA1my_65NK3WUdI3SZF0WIqNia4RvO1tIaQ13kFvEoTyD7_Ie5kt1FlkeEIxoC5ywQAvD_BwE#tab=tab_1

https://www.mayoclinichealthsystem.org/hometown-health/speaking-of-health/7-ways-to-combat-coughs-and-colds

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *