বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসাস্বাস্থ টিপস

অ্যাজমার ঘরোয়া চিকিৎসা

অ্যাজমা কি, অ্যাজমার কারন, লক্ষন ও অ্যাজমা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোকপাত করা হয়েছে।

অ্যাজমা শ্বাসনালীর অসুখ। শ্বসনতন্ত্রের প্রদাহ জনীত কারণে শ্বাস-প্রশাসে কষ্ট হয়। বুকে কফ জমে, শ্বাস নেওয়ার সময় সাঁই সাই শব্দ হয়। অ্যাজমার দুই ধরনের হয়ে থাকে।

  1. একটি অল্পবয়স থেকে শুরু হয়।
  2. আর এক ধরনের অ্যাজমা বয়স চল্লিশ পার হওয়ার পর হয়ে থাকে।

এগুলোর পেছনে জেনেটিক, ফ্যামিলিয়াল ও পরিবেশগত ফ্যাক্টর কাজ করে। পরিবেশগত কারন হচ্ছে যেমন কেউ পাটের কারখানায় কাজ করে। তারপর থেকে সে অ্যাজমার শিকার। অনেকেই ঠান্ডা ও স্যাঁতস্যাতে বস্তিতে বাস করার কারনে অ্যাজমায় আক্রান্ত হন। অনেক মহিলা চুলার ধোঁয়ার কারনে বেশি বয়সে অ্যাজমায় আক্রন্ত হন। অ্যাজম রোগে শ্বাসনালী এতটাই সংকুচিত হয় যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস খুবই কষ্ট হয়। অনেক সময় দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। অ্যাজমায় মৃত্যুর সম্ভাবনা যদিও কম তবে সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগীর কষ্টের মাত্রা বেশি হয়। সচেতন জীবন-যাপন করলে অ্যাজমা কে প্রতিরোধ করে সুন্দর জীবন-যাপন করা সম্ভব।

 

অ্যাজমা রোগের লক্ষণঃ

  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। টেনে টেনে শ্বাস নেয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস উঠানামা করে।
  • অ্যাজমা রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে সাঁই সাঁই শব্দ হয়।
  • একটু ঠান্ডা লাগলে বা ধুলাবালী নাকে ঢুকলে অ্যাজমা বেড়ে যায়।
  • অ্যাজমার উপসর্গ সাধারনত রাতে এবং শেষরাতের দিকে বেশি দেখা দেয়।
  • অ্যাজমাতে অ্যাটাক হওয়ার পর বুক চাপা, শ্বাসকষ্ট হয়। বুকে কফ জমে বসে যায় কিন্তু সহজে বের হতে চায় না।
  • শিশুরা অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বুকের ভেতর সাঁই সাঁই শব্দ করে। দুই পাঁজরের নিচের ও মধ্যবর্তী অংশ শ্বাস নেওয়ার সময় কিছুটা সংকুচিত হয়।

আরও জানুন:

বমি কি? বমি কেন হয়? বমি হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত।

শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে কি কি খাবার খাওয়া উচিত।

অ্যাজমা কেন হয়ঃ

অ্যাজমা বা হাঁপানি মূলত শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ জনীত একটি রোগ। ছোট-বড় যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা অ্যাজমার দুই ধরনের কারনের কথা বলেছেন।

  • জেনেটিক ফ্যাক্টর
  • পরিবেশগত ফ্যাক্টর

জেনেটিক ফ্যাক্টরঃ

বংশে বাবা-মা, দানা-দাদি, নানা-নানির যে কারও অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে হতে পারে।

পরিবেশগত ফ্যাক্টরঃ

যে পরিবেশে বাস করে বা কাজ করে সেই পরিবেশে অ্যাজমা উদ্রেককারী উপাদান থাকলে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন, কোনো কোনো মহিলা ৪০-৪৫ বছর বয়সে হটাৎ জানতে পারলেন অ্যাজমায় আক্রন্ত। এক্ষেত্রে তার বসবাসের পরিবেশ অ্যাজমার ট্রিগার থাকলে (ভেজা, স্যাতস্যাতে, আলোবাতাসহীন, সবসময় ঠান্ডা হয়ে থাকে, অথবা অপুষ্টির শিকার) প্রভৃতি পরিবেশগত কারনে অ্যাজমায় আক্রন্ত হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে অ্যাজমার অ্যালার্জেন থাকলে ( কাঠের স, মিল, তুলার মিল, পাটের মিল, ধানা ভাঙ্গা মিল, গম ভাঙ্গা মিল) প্রভৃতি কর্মক্ষেত্রে কাজ করার ফলে অনেকে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়।

অ্যাজমা কি ছোঁয়াচে রোগ?

অ্যাজমা শ্বাসনালীর অসুখ। এতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই আক্রন্ত হতে পারে। জেনেটিক কারনে অ্যাজমা হতে পারে। পরিবারের রক্তের সম্পর্ক বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি এমন কারো অ্যাজমা থাকলে জেনেটিকালি শিশু অ্যাজমায় আক্রন্ত হতে পারে। তবে অ্যাজমা বা হাঁপানি কোনো ছোঁযাচে রোগ নয়। মায়ের সংস্পর্শে থেকে কিংবা বুকের দুধ খেলে অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা নাই। অ্যাজমার ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এর থেকে ভালো থাকা যায়।

আরও পড়ুন:

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

অ্যাজমা কি পুরোপুরি ভালো হয়?

অ্যাজমা পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না। ছোট বয়সে অ্যাজমা হলে সঠিক চিকিৎসা নিলে অনেকটা ভালো হয়ে যায়। তবে বয়স বেড়ে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে আবার হতে পারে। বড়দের অ্যাজমা নির্মূল করা যায় না। অ্যাজমার ঘরোয়া চিকিৎসা এবং সেই সাথে সঠিক চিকিৎসা ও পরিমিত জীবন-যাপনের মাধ্যমে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।

অ্যাজমা রোগের ঘরোয়া প্রতিকারঃ

অ্যাজমার পরিপূর্ণ চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। অ্যাজমা রোগী খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরায় কিছু নিয়ম অনুসরন করে চললে স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্ভব।

  • অ্যাজমার সাথে স্থূলতার সম্পর্ক আছে। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি শ্বাস-নালীকে সংকুচিত করে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। এজন্য নিয়মিত শরীর চর্চা করা উচিত। ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এভাবে চললে অ্যাজমার ঝুঁকি প্রশমন করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা যায়।
  • সব সময় পরিষ্কার জামা-কাপড় ব্যবহার করুন। নিয়মিত বিছানা চাদর ও বালিশের কভার পরিষ্কার করুন।  ধুলা-বালি থেকে বিরত থাকুন। রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। বাসায় কোনো পোষা প্রাণী রাখবেন না। 
  • প্রচলিত আছে “আদা সকল রোগের দাদা”।

    নিয়মিত আদা চা খেতে পারেন। চিকিৎসক মতে, আদা শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করে শ্বাননালকে সংকুচিত হওয়া থেকে বিরত রাখে।

 

 

 

  • ধূমপান ও সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করুন।
  • বিটা ক্যারোটিন সমৃ্দ্ধ গাজর খান। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  • রসুনে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

    এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামাটরি উপাদান শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে। তাই অ্যাজমা রোগীদের বেশি করে খাওয়া উচিত।

 

 

 

  • প্রাচীনকাল হতে মধু প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মধু হচ্ছে সর্ব রোগের মহাওষুধ। অ্যাজমা রোগী নিয়মিত মধু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। 
  • বাসস্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন। গবেষণায় দেখা গেছে, বদ্ধ ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে অ্যাজমা বেশি হয়।
  •  শীতকালে বিশেষ সতর্ক থকুন। সকাল সন্ধ্যায় গরম পানীয় যেমন, চা, কফি খান। অবশ্যই গরম কাপড় পরিধান করুন। 
  • প্রতিদিনই ভিটামিন সি যুক্ত ফল

    ( লেবু, কমলা, তেঁতুল, মাল্টা) খান। এতে অ্যাজমার প্রকোপ হ্রাস পায়।

 

 

 

  • যদি কোন খাবার অ্যাজমার উদ্রেক ঘটায় তাহলে তা পরিহার করুন।

এসব ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চলে অ্যাজমার জটিল লক্ষণ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন:

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

অ্যাজমার চিকিৎসাঃ

অ্যাজমার ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। নিয়ন্ত্রনই হচ্ছে অ্যাজমার বড় চিকিৎসা। চলাফেরা ও খাবার-দাবার নিয়ন্ত্রন করতে হয়। বর্তমানে মন্টিলুকাস্ট ও ডক্সিফাইলিন অ্যাজমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ইনহেলার অ্যাজমার একটি কার্যকরী চিকিৎসা।

আরও পড়ুন:

গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়

বি:দ্র: চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত ওষুধ সেবন করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *