এ
আপনি কি জানেন, শ্বাস-কষ্টের কারন কি? অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে-
- হৃদরোগ
- ফুসফুসের রোগ, যেমন ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD),
- অ্যাজমা বা নিউমোনিয়া
- রক্তের সমস্যা অর্থাৎ রক্তস্বল্পতা
- অ্যালার্জি, স্থূলতা বা থাইরয়েড সমস্যা
- ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
শ্বাসকষ্ট হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত:
এ জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে:
শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মধু
অ্যাজমা রোগীর জন্য প্রথমেই যে খাবারের নাম সামনে আসে তা হচ্ছে মধু। শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য মধু বেশ উপকারী খাদ্য। একে পথ্যও বলা চলে। ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মধু বেশ কার্যকর। আমরা জানি, প্রায় মধ্যযুগ হতে অ্যাজমার চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার হচ্ছে। দিনে তিনবার, এক গ্লাস করে গরম জলে এক চামচ করে মধু মিশিয়ে পান করলে দারুন উপকার মিলবে।
শ্বাসকষ্টে লেবু
ভিটামিন-সি জাতীয় লেবু শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। ভিটামিন ‘সি’-যুক্ত যেকোনো খাবারই আসলে শ্বাস কষ্ট লাঘবে ভালো কাজ করে। বিশেষ করে শিশুদের অ্যাজমায়। লেবু তে ভিটামিন ‘সি’ আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। অনেক ক্ষেত্রে শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে লেবু। নিয়মিত লেবু খেলে শ্বাস কষ্ট অসুখে ভালো উপকার পাবেন।
আদা শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়ক
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে আদা হল মহৌষধি। আদায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি এবং অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি এজেন্ট। আদা শ্বাসনালির প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসনালি সংকোচন রোধে সাহায্য করে।।ফুসফুসের ধমনিতে কোনো সংক্রমণ থাকলে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হলে অথবা হাঁপানি থাকলে প্রতিদিন দুবেলা এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস, মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেলে এবং ঠান্ডাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চললে ১৫ দিনের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যায়। এটি শ্বসনতন্ত্রকে শিথিল করতে এবং ফুসফুসের অতিরিক্ত শ্লেষ্মা অপসারণ করতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজে শ্বাসকষ্ট নিরাময়
পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজ খেলে শরীরে হিস্টামিন নিঃসরণের হার কমে যায়। এতে শ্বাসনালির সংকোচনজনিত জটিলতাও কমে। ফলে শ্বাসকষ্ট কম হয়।পেঁয়াজে আছে প্রোস্টাগ্লানডিন, যা শ্বাসনালি দিয়ে নিঃশ্বাসের বাতাস চলাচলের কাজ সহজ করে দেয়। এক্ষেত্রে কাঁচা পেঁয়াজ খেলেই বেশি উপকার মেলে।
রসুন শ্বাসকষ্টের প্রবণতা কমায়
ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ। এসব কারনে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে রসুন। রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ অনেকটা ওষুধের মতোই কাজ করে। যার ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট সমস্যা দেখা দিতে পারে। রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শ্বাসকষ্ট কমাতে আপেল
হাপানি ও শ্বাসকষ্টের তীব্রতা কমাতে আপেল ভালো কাজে দেয়। “Advanced in nutrition” জার্নাল আপেল নিয়ে গবেষণা করেছে। প্রায় ৬৮ হাজার নারী এই গবেষণায় অংশ নেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে একটি আস্ত আপেল গ্রহণ করেছেন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাদের হাঁপানির তীব্রতা কমেছে সবচাইতে বেশি।
শ্বাসকষ্টে ক্যাপসিকাম
ক্যাপসিকাম এর গুণাগুণ প্রচুর। এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। তাই অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ক্যাপসিকাম রান্না করলে এর ভিটামিন সি অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য কাঁচা ক্যাপসিকাম সালাদ করে খেলে এর পুরোপুরি পুষ্টিগুন পাওয়া যা।। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ক্যাপসিকামে ভিটামিন সি ও কোলাজেন পাওয়া যায়। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যাপসিকাম এ প্রচুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে যা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
শ্বাসকষ্ট কমাতে খান টমেটোর রস
টমেটোর রস বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি প্রতিহত করতে সাহায্য করে। তাই এটি নিয়মিত খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা।
তরমুজও শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে
তরমুজের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ভিটামিন-সি ছাড়াও তরল জাতীয় এই ফল শরীর ঠাণ্ডা রাখে। যা সার্বিকভাবে শ্বাসকষ্টের রোগীদের শরীর সুস্থ রাখে।
পালংশাক শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন লাঘব করে
পালংশাক ম্যাগনেসিয়ার এর ভালো উৎস। এ ছাড়া পালংশাকে থাকে ভিটামিন ‘বি’। এটিও অ্যাজমার প্রকোপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।এই ম্যাগনেশিয়াম অ্যাজমার কষ্ট লাঘবে কাজ করে
হলুদ অ্যাজমা উপশম করে
হলুদ শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসকষ্ট উপশম করতে ভালো সহায়ক।
ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য
ভিটামিন সি অ্যাজমায় ভালো উপকারী। এ কারণে যাদের অ্যাজমা ও শ্বাসনালীতে আছে। তাদের প্রতিদিন ভিটামিন ‘সি’-যুক্ত খাদ্য খাওয়া উচিত।
সরষের তেলেও শ্বাসকষ্ট কমে
শ্বাসকষ্টের প্রকোপ কমাতে সরষের তেল রসুন দিয়ে গরম করে রোগীর পায়ের তালুতে ও হাতের তালুকে ভালো করে ঘষে দিলে তেল ও হাত-পায়ের ঘর্ষণের ফলে কিছুটা তাপ উৎপন্ন হয়ে রোগীর শরীরে রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়। এতে রোগীর ফুসফুস ও শ্বাসনালী কিছুটা ছেড়ে দেয়। রোগী কিছুটা আরাম পায়।
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট কিংবা অ্যাজমার অ্যাটাক হলে করণীয়
- বিশ্রাম নিন
- গভীর শ্বাস নিন
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
- ইনহেলার ব্যবহার করুন
- যদি শ্বাসকষ্ট গুরুতর হয় বা বাড়তে থাকে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করবেন না।
সতর্কতা মূলকভাবে জরুরী ভিত্তিতে কাছে রাখুন
অ্যাজমা রোগীর জন্য জরুরী ভিত্তিতে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কাছে রাখুন।হটাৎ গভীর রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে যাতে প্রাথমিকভাবে বাসায় জরুরী সেবা প্রদান সম্ভব হয়।
- ইনহেলার অথবা নেবুলাইজার
- জরুরী ওষুধপত্র
- পালস অক্সিমিটার
শ্বাস কষ্টের রোগীর এই পালস অক্সিমিটার থাকলে ভালো। অক্সিজেন লেভেল জানতে সহায়তা করবে।
- ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ—স্বাভাবিক মাত্রা।
- ৯৫ শতাংশের কম—অক্সিজেন ঘাটতি (একে চিকিৎসা পরিভাষায় হাইপোক্সিয়া বলা হয়)।
- ৯০ শতাংশের কম—জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
বি:দ্র: আর জরুরী অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করবেন না।