Site icon Sustho Thaki

নবজাতকের শ্বাসকষ্টের লক্ষন কি কি এবং নবজাতকের শ্বাসকষ্ট কেন হয়।

নবজাতকের শ্বাসকষ্টের লক্ষণ

নবজাতকের শ্বাসকষ্টের লক্ষণ

আজকের পোস্টে আমরা নবজাতকের শ্বাসকষ্ট কেন হয়, নবজাতকের শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করব।

একটি শিশু যখন ভূমিষ্ঠ হয় তখন পরিবারের সদস্যদের আনন্দের সীমা থাকে না। আনন্দের সাথে এই সময়টাতে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে সচেতন থাকতে হয়। বাচ্চা যেখানেই ডেলিভারি হোক বাসা বাড়িতে কিংবা ক্লিনিকে। নরমাল কিংবা সিজার। যে পদ্ধতে এবং যে স্থানেই বাচ্চার জন্ম হোক না কেন বাচ্চার জন্মের মুহূর্তে একজন শিশু ডাক্তারের উপস্থিতি নিশ্চিত জরুরী। জন্মের পরপরই বাচ্চা শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে কিনা, বাচ্চার হৃদস্পন্দন ঠিকঠাক আছে কিনা আরো অন্যান্য বিষয়গুলো অবজারব করা উচিত। বাচ্চার জন্মের ঠিক পরের মুহূর্তটা এ জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

নবজাতকের সময়কালঃ

একটি শিশু জন্মের ১ম দিন থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময়কালকে ঐ শিশুর নবজাতক সময়কাল। নবজাতক জন্মের প্রথম এক মিনিটেই কান্না করবে। এই কান্না করাটা খু্বই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টাকে বলা হয় গোল্ডেন মিনিট। নবজাতক জন্মের প্রথম মিনিটেই যদি কান্না না করে তাহলে সেটা কোনো বিপদের চিহ্ন। নবজাতক গ্রুপ যখন মায়ের পেটের ভেতর থাকে তখন তাদের শ্বাস নিতে হয় না। মায়ের অক্সিজেন দিয়েই তারা চালিয়ে নেয়। জন্মের পর প্রথম তাদের শ্বাস নিতে হয়। তাই জন্মের পরই শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিকমত হচ্ছে কিনা, তার ব্রেনের বিকাশ সঠিকমতে হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।

 

একজন সুস্থ নবজাতকের বৈশিষ্ট্যঃ

একটি শিশু গর্ভে ৩৭ -৪২ সপ্তাহ অতিক্রান্ত করে ভূমিষ্ঠ হয় তখন এই সময়টা হচ্ছে একজন সুস্থ নবজাতকের আদর্শ গর্ভকাল। 

সুস্থ নবজাতকের কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্যঃ

 

আরও পড়ুন: সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

নবজাতকের শ্বাস প্রশ্বাসঃ

এখন যদি দেখা যায় বাচ্চা কান্নাকাটি করল ঠিকই কিন্তু বাচ্চার প্রচন্ড দ্রুতগতিতে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, বাচ্চার বুকের পাঁজর ভেতরের দিকে সংকুচিত হচ্ছে, বাচ্চার নাকের পাতাগুলো ফুলে ফুলে যাচ্ছে, বুকের দুধ টেনে খেতে পারছে না, নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসে গোঙানোর আওয়াজ হতে থাকে এই জিনিসগুলোই হচ্ছে নবজাতকের শ্বাসকষ্টের লক্ষণ।

 

নবজাতকের শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায়

নবজাতকের শ্বাসন সংক্রান্ত সমস্যা Newborn Respiratory Distress Syndrome (NRDS) এর লক্ষণ নিম্নরূপ:

বাচ্চা ডেলিভারির সময় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঐ সময়টাতে উপস্থিত থেকে উপরের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেন।

যদি নবজাতকের শ্বাসকষ্টের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে এক্ষেত্রে পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করে অক্সিজেন লেভেল পরিমাপ করে দ্রুত জরুরী চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসক যদি নবজাতকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিছু লক্ষ্য করেন তাহলে তাৎক্ষণিক বাচ্চাকে  NICU (neonatal intensive care unit) এ ট্রান্সফার করার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

নবজাতকের শ্বাসকষ্টের কারন কি?

নবজাতকের শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসনালীর সমস্যা Newborn Respiratory Distress Syndrome (NRDS) হওয়ার কারন কি? জন্মের পর থেকে শুরু করে যে কোন বয়সে বা যে কোন সময়ে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শিশু মায়ের পেট থেকে এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আসতে পারে। বাচ্চার হার্টে কোন সমস্যা থাকতে পারে। প্রিম্যবাচ্চার বাচ্চার ফুসফুস পরিপূর্ণ না হলে এমনটা হতে পারে। বাচ্চার জন্মগত হার্নিয়া, বাচ্চার খাদ্যনালী বা শ্বাসনালী তৈরি না হওয়া সহ এরকম অনেক কারনে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

 

নবজাতকের শ্বাসকষ্টের কারনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় জানতে হয়। নবজাতক কি পরিপূর্ণ সময়ের পরে ভূমিষ্ট না সময়ের আগে ভূমিষ্ট। সময়ের আগে প্রি ম্যাচিউর বাচ্চা হলে এবং এ সকল নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হলে এটাকে প্রি ম্যাচিউরড লাং ডিজিজ (premature lung disease) RDS respiratory disease Syndrome অর্থাৎ সময়ের আগে হওয়ার কারনে ফুসফুসটা হয়তো পরিপক্ব হয়নি।

আর সম্পূর্ণ সময়ের পরে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে শ্বাসকষ্ট হলে সেক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়

নবজাতকের পরীক্ষা-নীরিক্ষাঃ

এক্ষেত্রে বাচ্চার পরীক্ষা-নীরিক্ষা খুব জরুরী বিষয়।  NICU (neonatal intensive care unit) বাচ্চাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে হয়। বাচ্চার রক্তের পরীক্ষা, এক্সরে পরীক্ষা অক্সিজেনের ঘাটতি হচ্ছে কিনা, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে কিনা এসব বিষয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানতে হবে। বাচ্চার Hypoxia হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। বাচ্চার ব্লাড প্রেসার মনিটর করা এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য নিয়মিত অক্সিজেন লেভেল মনিটর করতে হয়। 

 

প্রতিরোধঃ

মায়ের সুস্থ জীবন-যাপন খুবই জরুরী। মা সুস্থ থাকলে সন্তানও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারন মায়ের যে কোন সমস্যা তার পেটের বাচ্চার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে খাদ্যাভাস। রাসায়নিক খাবার বা প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার না খাওয়া। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ না খাওয়া। নোওরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এড়িয়ে চলা। ধুলাবালী, ইটের ভাটা, শিল্পকারখানার ধোয়া তৈরি হচ্ছে এসব জায়গায় না যাওয়া।

নবাজাতকের যত্নঃ

বাবা মা শিশুর প্রথম ডাক্তার। এ জন্য বাবা মাকে সচেতন থাকতে হয়। নবজাতক সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টাতে নানাবিধ জটিলতা ঘটে। কারন নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। ডেলিভারি  হাসপাতালে বা বাসায়, নরমাল কিংবা সিজার যেভাবেই হোক এই সময়টাতে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। 

আরও পড়ুন:

হাঁপানি বা অ্যাজমা কি? অ্যাজমার কারন, লক্ষণ ও অ্যাজমা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

 

 

Exit mobile version